Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
যশোরে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২৩ পালিত
বিস্তারিত

যশোরে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২৩ উদযাপন

বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসটি বার্ষিক ইভেন্ট যা পৃথিবীতে জীবনকে সমর্থন করার জন্য মাটির তাৎপর্য প্রচার করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। এটির লক্ষ্য কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং আরও অনেক কিছুতে মাটি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়কে সচেতন করা। মাটির স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব কেন্দ্রীভূত করা এবং মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার পক্ষে সমর্থন করার জন্য, প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস (World Soil Day) পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- “মাটি ও পানিঃ জীবনের উৎস”।

 র‍্যালী শেষে সকাল ১০.০০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলার জেলা সুযোগ্য প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিট্রেট জনাব মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, যশোর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব ড. মো: মোতাসীম আহম্মেদ ও মৃত্তিকা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, যশোরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব জি. এম. মেসবাহুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জনাব ড. মো: মোতাসীম আহম্মেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, যশোর । বিশেষ অতিথি ছিলেন মোঃ রোকনুজ্জামান, যুগ্ম পরিচালক (সার), বিএডিসি, যশোর এবং সমরেন বিশ্বাস, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর ।  এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন  কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বারি, বিএডিসি, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, এসসিএ, এর  কর্মকর্তাগন, জেলা মৎস্য অফিসার, জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার, জেলা তথ্য অফিসার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষক প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, যশোরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব জি. এম. মেসবাহুল ইসলাম।


মূল প্রবন্ধ  উপস্থাপনায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী জনাব জি. এম. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, সারা পৃথিবীতে মানুষ যে সকল খাবার খায়, তার অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ আসে মাটি হতে। ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৯৩০ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। পৃথিবীর সুপেয় পানির মাত্র ২.৫% হল ব্যবহারযোগ্য পানি এবং বাকি ৯৭.৫% হল ভূগর্ভস্থ পানি ও বরফ। সুপেয় পানির ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে। ১৯৭১ সালে চাষযোগ্য জমি ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর, খাদ্য উৎপাদন হতো ১ কোটি ১০ লক্ষ টন। বর্তমানে চাষযোগ্য জমি ৮৮ লক্ষ ২৯ হাজার হেক্টর, খাদ্য উৎপাদন ৩ কোটি ৬৬ লক্ষ টন (চাল) । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের তুলনায় চাষযোগ্য জমি হ্রাস পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশি কিন্তু তার বিপরীতে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণের বেশি। কৃষিবান্ধব সরকারের সঠিক নীতি প্রণয়নের ফলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২ এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষির উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে সীমিত মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী আরও বলেন,  বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬৮,৭৬০ হেক্টর (০.৭৩%) আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। যেখানে গৃহ নির্মাণ হচ্ছে ৩০,৮০৯ হেক্টর  জমিতে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ (শতকরা প্রায় ৩৪ ভাগ) মাটি অবক্ষয়ের শিকার। যশোর জেলায় বর্তমানে বিবিধ অকৃষিজ জমি মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ২৮ শতাংশ যা ১৯৭০ সালে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ । জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আশংকা করছে যে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ অবক্ষয়ের এই হার নব্বই শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। সারের ব্যবহারও বেড়েছে। ১৯৬১ সালে আবাদি জমিতে সারের ব্যবহার ছিল ২.৬ কেজি/ হেক্টর যা ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে  ৩৮৪.২০ কেজি/হেক্টর। ১৯৭২ বাংলাদেশের সারের ব্যবহার ছিল ১৯.৯০ কেজি/হেক্টর এবং ২০২১ সালে ৩৮৪.২০ কেজি/হেক্টরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় বার্ষিক ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির হার ১৯৭৫ সালে সর্বাধিক ৬৬.৬৬%-এ পৌঁছে এবং তারপর ২০২২ সালে হ্রাস পেয়ে ১৯.৭১% পৌঁছায়।

প্রধান অতিথি সূযোগ্য প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিট্রেট জনাব মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মৃত্তিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অনবায়নযোগ্য সম্পদ। এই সম্পদ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একদিকে মাটির পুষ্টি উপাদানের মাত্রা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমান কমে যাচ্ছে তাই আমাদের মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। সভাপতি জনাব ড. মো: মোতাসীম আহম্মেদ বলেন, মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে আমাদের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবেনা । সার ব্যস্থাপনায় জৈব সার অবশ্যই অর্ন্ভুক্ত করতে হবে। তবেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা । সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মাটিকে সোনার চেয়ে খাঁটি বলা হয় অথচ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এই মাটি আজ হুমকির সম্মুখীন। তাই আমাদের উচিত মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা যাতে মাটির কাংখিত উর্বরতা ধরে রাখা যায় এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

ডাউনলোড
ছবি
প্রকাশের তারিখ
31/12/2023
আর্কাইভ তারিখ
01/12/2024